139 ) গেরাইম্যা ঈদ (EID IN THE VILLAGE) ! - 🙌🏻⌨️📲 Written by Junayed Ashrafur Rahman
139 ) গেরাইম্যা ঈদ (EID IN THE VILLAGE) ! - 🙌🏻⌨️📲 Written by Junayed Ashrafur Rahman ✒
গ্রামের ঈদ কেমন হয় , সেটা বুঝেছিলাম 1994 সালে।
তখন ঈদ মানেই আমার কাছে ছিলো নতুন জামা , ভোরে উঠে হৈ হল্লা করা , বাড়িতে পোষা দেশি ও বিদেশি (আফ্রিকার মোরগ নামে পরিচিত কালো বড় মোরগ। যেগুলোর ওজন হতো চার , পাঁচ এমনকি ছয় কেজি পর্যন্ত) মোরগের রোস্ট , কোর্মা , ঝাল করে কসানো মাংস , পোলাও , সেমাই খাওয়া আর নান্দাইল বাজারের স্বদেশ বাবুর পটকার দোকান থেকে পটকা কিনে পটকা ফাটানো প্রভৃতি।
কিন্তু 1994 সালে গ্রামের ঈদ সম্পর্কে আমার অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।
তখন গ্রামের বাড়িতে আমার পিতামহ জীবিত ছিলেন।
তখন গিয়েছিলাম আমাদের বাড়িতে ঈদুল ফিতর করার জন্য।
তাই ঈদের আগের দিন বাজার থেকে দুই কেজি গরুর মাংস আর এক কেজি খাসির মাংস ক্রয় করি।
হ্যাঁ , আমি 1994 সালেই সেই বয়সেই দরাদরি করে বাজার - সদাই করাতে অভ্যস্ত হয়েছিলাম।
কেননা , মাছের বাজার আর মাংসের বাজার মানেই দরাদরির বাজার। এখন তো কেজিতে মাছ বিক্রি হয় - কিন্তু তখন মাছ কেনাবেচা হতো ওজন ছাড়াই দরাদরিতে। সেটা ছোট মাছই হউক আর বড় মাছই হউক।
এখন চিনি মহালের পাশে মাছ - মাংসের বাজার থাকলেও , তখন কিন্তু ছিলো বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স যেস্হানে আছে , সেস্হানে।
বর্তমানে গরুর মাংসের দাম কেজি পাঁচ থেকে ছয় শ' টাকা (TAKA) আর খাসির মাংস আট থেকে নয় শ' টাকা। কিন্তু তখন গরুর মাংসের দাম কেজি ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা আর খাসির মাংস ষাট থেকে সত্তুর টাকা।
বর্তমানে হোটেলে খাসির (GOAT) একটা হাড্ডি (নিহারি) খাইলেই লাগে এক শ' টাকা।
তাও আবার সেটা জীবিত খাসির হাড্ডি নাকি মরা খাসির হাড্ডি নাকি খাসির নামে চালিয়ে দেয়া কুত্তার (DOG) হাড্ডি - সেটা একমাত্র আল্লাহ্ জানেন আর যারা খাওয়াচ্ছে , ওরাই জানে !!!
আর কিনেছিলাম , পেঁয়াজ , রসুন , তেল , লবণ আর অন্যান্য সব্জি ।
পেঁয়াজ , রসুন আর আদার চাষও গ্রামের বাড়িতে হতো - কিন্তু সেটা হতো খুবই সীমিত স্হানে , যেস্হানে সম্ভাবনা ছিলো না ধান হওয়ার।
🌟 সেদিনই দুপুরের পরপরই রওয়ানা হই বাড়ির উদ্দেশে।
তখন পাকা রাস্তা ছিলো শুধু নান্দাইল হসপিটাল মোড় পর্যন্ত। এরপরের বাকিটা রাস্তা ছিলো মাটির রাস্তা। শুকনা মওসুমে ছিলো শুধু বালি আর বালি। আর বৃষ্টির সময়ে ছিলো শুধু কাদামাটি।
সেই দিন অবশ্য বৃষ্টি ছিলোনা। তাই পেডেলে পা দিয়ে চালানো রিক্সায় উঠে গিয়ে নামলাম আবাল ধনীর বাজারে।
তখন গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত কোন রাস্তাই ছিলোনা।
শুকনার দিনে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আর বৃষ্টির দিনে ক্ষেতের পাড় (আল) দিয়ে যেতে হতো।
🌟 তাই বলে , আমার পিতামহের বাড়ির লোকেরা ছিলোনা অসভ্য !!
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বীরভূমের গ্রামের বাড়ির রাস্তার অবস্থা ছিলো আরও শোচনীয় !!!
আর তিনি মাটির রাস্তা দিয়ে শুকনা ও বৃষ্টির সময়ে ধূলা ও কাদার উপর দিয়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন - যেভাবে যেতো শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "বিলাসী" গল্পের কথক ন্যাড়া আর ওর সহপাঠীরা।
সেই তুলনায় আমার পিতামহের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটা বেশ ভালোই ছিলো।
🌟 আবাল ধনীর বাজারে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিলাম দু টাকা। তখন ভাড়া দু টাকাই ছিলো।
বাজার সদাই নিজের হাতে তুলে নিয়েই গ্রামের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম।
প্রিয় পাঠক / পাঠিকা , আমার বয়সটা তখন সাত - আট হলেও শরীরের শক্তি ছিলো পনের - বিশ বছরের ছেলেদের চেয়েও বেশি। আর শরীরের গঠনটা ছিলো অনেকটা গরিলার মতো।
তাই অবলীলায় পনের - বিশ কেজি বাজার সদাই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম।
আবার গ্রামের বাড়ি থেকে অবলীলায় বিশ - ত্রিশ কেজি মাছ অবলীলায় মফস্বলের (বর্তমানে পৌরসভা) বাড়িতে নিয়ে আসতাম।
🌟 হাঁটতে হাঁটতে হামাই বিলের (Bog Land) মধ্য দিয়ে যেতে লাগলাম। তখন হামাই বিলের মাটি রৌদ্রের অল্প তাপেই ফেঁটে চৌচির হতো। তাই সাবধানে পা ফেলে ফেলে যেতে হতো। তা না হলে , ফাটা মাটির গর্তে পা ঢুকে যেতো।
অবশেষে , প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পরে বাড়িতে পৌঁছাই।
🌟 গ্রামের বাড়ির ইফতার তো আর শহরের মতো হয়না। খেজুর , ডাবের পানি , নারিকেলের হালুয়া আর মুড়ি মাখানো দিয়েই সেইদিন ইফতার করেছিলাম আমার পিতামহের সঙ্গে।
বাড়িতে দাদা - দাদী ছাড়াও আরও সাত - আটজন লোক এমনিতেই থাকতো। ওদের কেউ ছিলো আমাদের আত্মীয় , কেউ দূর সম্পর্কের আত্মীয় আবার কেউ আত্মীয়ের আত্মীয়।
তারপরেও ছোট একটা কক্ষ থাকতো। আমি সেই কক্ষতেই সেই রাতে ঘুমাই।
🌟 ঈদের সকালে মনে করেছিলাম , নান্দাইলের মতোই ঈদ হবে।
কিন্তু না , তেমন হয়নি।
একেবারে অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই সেদিনের সকালটা শুরু হয়েছিলো।
যে যার নিজের কাজ দিয়েই ভোরটা শুরু করেছিলেন।
আমি সকালে দুধের ক্ষীর , হাতে তৈরি সেমাই আর আতপ চালের গুড়া দিয়ে তৈরি রুটি খাইলাম।
তখন গ্রামের মানুষেরা এশার নামাজের পরেই খেয়ে ঘুমাতেন। আর ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করতেন।
এখন অবশ্য এই নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ইন্টারনেট আর সেটেলাইট (ডিশ এন্টিনা) টিভির কারণে। ওগুলো দেখে ঘুমাতেও দেরি হয় আবার অনেকের ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়।
🌟 ঈদের নামাজের কিছুক্ষণ আগে যে যার বাড়িতে এলেন আর গোসল করে ঈদের মাঠে রওয়ানা হলেন। আমিও প্রস্তুত ছিলাম। তাই পিতামহের সঙ্গে গেলাম ঈদের নামাজ পড়ার জন্য।
তখন আমাদের গ্রামে একটাই ঈদের মাঠ ছিলো। ঈদের নামাজ সম্পন্ন করার পরে বাড়িতে এসে পিতামহের সঙ্গে খাবার খাইলাম। তবে , আরও কয়েকজন মেহমান এবং গ্রামের ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে খাবার খাইলেন।
গ্রামে সেই সময়ে রোস্ট অথবা কোর্মা সাধারণত রান্না করা হতো না।
সাধারণত দেশি মোরগ কসিয়ে ঝাল করে , বেশি করে আদা ও পেঁয়াজ বাটা দিয়ে খাসির মাংস এবং গরুর মাংস আলু দিয়ে কসিয়ে রান্না করা হতো , সঙ্গে পোলাও।
ঈদ এই পর্যন্তই !
হ্যাঁ , এই পর্যন্তই !!
এরপরে , সেই আগের মতোই যে যার কাজে ব্যস্ত হলেন !!!
বছরের অন্যান্য দিনের মতোই।
আমার কাছে তখন ব্যাপারটা অন্য রকমই ছিলো। ঈদের মাঠের পাশে নাই কোন খেলার দোকান , নাই কোন খাবারের দোকান। পটকা কী জিনিস সেটা তো গ্রামের মানুষে তো তখন বলতে গেলে চিনেইনা।
🌟 তাই ঐ অল্প বয়সে ঐদিনের ঈদটা ছিলো দাদা - দাদীর সঙ্গে আনন্দের আর নান্দাইলের তুলনায় প্রায় আনন্দহীন। তাই আমি দাদা - দাদীকে বললাম , বাসায় চলে যাবো।
এই কথা শুনে দাদা - দাদী ও অন্যান্যরা শুধু হাসে।
কেননা , তিনিরাও বুঝতে পেরেছিলেন যে , নান্দাইলের ঈদ করে অভ্যস্ত আমার কাছে গ্রামের ঈদটা তেমন আনন্দের হবে না।
তাই , পিতামহ বললেন , দুপুরে খেয়ে একটু বিকালের দিকে যেন রওয়ানা হই।
প্রায় দুইটার দিকে নারকেল গাছ থেকে ছয়টা ডাব পাড়ি। তারপর হাত মুখ ধুয়ে দুইটা কেটে একটা ডাব আমি খাই আর আরেকটা পিতামহকে খাওয়াই। বাকি চারটা একসঙ্গে বেঁধে রাখি নান্দাইলে নিয়ে আসার জন্য।
আমার স্বাস্থ্য তখন অস্বাভাবিক মোটা থাকলেও আমি বড় বড় গাছে অনায়াসে উঠতে পারতাম।
তাই গাছ থেকে ডাব - নারকেল নামানো ছিলো আমার জন্য সহজ ব্যাপার।
বিকালের আগে আবার মাংস দিয়ে পোলাও খাই এবং পরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকালের দিকে চারটা ডাব নিয়ে নান্দাইলের বাড়ির দিকে রওয়ানা হই।
🌟 2005 সালে ঈদের ব্যাপারটাই আমার কাছে অন্য রকম হয়ে যায়।
কেননা , ততদিনে জেনেছি যে , ঈদ মানেই ছুটি অথবা আনন্দ না - বরং দায়িত্বও বটে।
হসপিটালে , পুলিশে , আর্মিতে এবং অন্যান্য সংস্থায় যিনিরা চাকরি করেন , তিনিদের বছরের দুইটা ঈদের একটা ঈদে ডিউটি করতে হয়।
আবার , পোল্ট্রি এবং ডেইরি শিল্পে যিনিরা চাকরি করেন , তিনিরাও দায়িত্বের কারণে বছরের একটা ঈদ বাড়িতে করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আরেকটা ঈদ চাকরিতে দায়িত্বরত অবস্থায় স্বল্প পরিসরে উদযাপন করেন। তিনি শ্রমিক , সুপারভাইজার , এক্সিকিউটিভ , মেনেজার , এজিএম , ডিজিএম , জিএম ...... যেই হয়ে থাকেন না কেন !!!
🌟 আর ঈদের কারণে নতুন জামা , পটকা ফাটানো ...... প্রভৃতিতেও আমার আর আগ্রহ নাই।
কেননা , জীবনের বাস্তবতায় ঈদের ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে গেছে !!!
Comments
Post a Comment